সংবাদচর্চা রিপোর্ট :
নির্বাচনের পাশাপাশি নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলাবাসীর ভাগ্যও ঝুলে গেছে। কবে নাগাদ এই উপজেলা পরিষদের নির্বাচন হবে তা এখনও স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাচ্ছে না। সংশ্লিষ্টরা এ বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলতেও পারছেন না।
২২ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্টের অ্যাপিলেট ডিভিশনে সদর উপজেলা নির্বাচন সংক্রান্ত শুনানির দিন ধার্য ছিল। এদিন শুনানি হলেও তা পূর্ণাঙ্গ হয়নি। নতুন করে আবার ধার্য তারিখ দেওয়া হয়েছে বলে জানালেন সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বিশ^াস। তবে নতুন তারিখ কবে রাখা হয়েছে তা তিনি নিশ্চিত নন বলে জানিয়েছেন।
আবুল কালাম আজাদ বিশ^াস বলেন, ‘২২ এপ্রিল আদালতে শুনানি হয়েছে। তবে আংশিক শুনানি হয়েছে। নতুন করে আবার শুনানির তারিখ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এই নতুন তারিখ কবে তা এখনও নিশ্চিত হতে পারিনি। দুই একদিন পর সে ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যাবে।’
সূত্র মতে, প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনী তফসিলে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদও ছিল। তফসিল অনুযায়ি এই উপজেলা ৮ মে ভোটগ্রহণের দিন ছিল। ২২ এপ্রিল ছিল মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন। তবে, সীমানা সংক্রান্ত জলিটলতায় এই নির্বাচন ২২ এপ্রিল পর্যন্ত স্থগিত ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন থেকে। এদিন সুপ্রিম কোর্টের অ্যাপিলেট ডিভিশনে এই সংক্রান্ত মামলার শুনানির দিন ধার্য ছিল।
সূত্র আরও জানায়, সীমানা সংক্রান্ত জটিলতায় আদালতে পৃথক তিন ব্যক্তি মামলা দায়ের করেন। যা দীর্ঘদিন চলমান ছিল। এ কারণে গত দশ বছর এই উপজেলা কোনো ভোটগ্রহণ হয়নি। ফলে ২০০৯ সালে নির্বাচিত আবুল কালাম আজাদ বিশ^াসই চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। গেল বছর ওই মামলা নিষ্পতি হওয়ায় নির্বাচন কমিশন থেকে সদর উপজেলা পরিষদে নির্বাচন করার প্রস্তুতি গ্রহণ করে তারিখও ঘোষণা করে। দীর্ঘ পনের বছর পর আবারও নির্বাচনী ডামাডোল বেজে উঠায় উৎফুল্ল হয়ে উঠেন সদর উপজেলার সাধারণ ভোটাররা। উপজেলাজুড়েই নির্বাচনী বাতাস বইতে শুরু করে। সম্ভাব্য প্রার্থীরা নির্বাচনকে সামনে রেখে সরব হয়ে উঠেন। প্রার্থীদের পাল্টাপাল্টি বক্তব্যে উত্তেজনার পারদও ছড়াতে থাকে চারদিকে।
অন্যদিকে নির্বাচনকে সামনে রেখে জটিলতা দেখা দেয় প্রভাবশালী সাংসদ শামীম ওসমান বলয়ে। এই বলয়ের শাহ্ নিজাম ও শাহাদাৎ হোসেন ভূঁইয়া সাজনু মুখোমুখি অবস্থানে চলে যান। তারা দুজনই অনঢ় ছিলেন নির্বাচনে প্রার্থী হতে। একে অপরকে ঘিরে পাল্টাপাল্টি বক্তব্যও দিতে শুরু করেন। এতে করে নির্বাচনী মাঠেও উত্তাপ ছড়াতে শুরু করে। এ নিয়ে বেশ বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েন প্রভাবশালী এমপি শামীম ওসমান।
শামীম ওসমান বলয় থেকে কে প্রার্থী হবেনÑ তা নির্ধারণ করার কথা ছিল গত ৩০ মার্চ। এদিন ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা থেকে সাংসদ শামীম ওসমান সেই প্রার্থী নির্ধারণ করবেন বলেই শোনা গিয়েছিল। কিন্তু সেদিন প্রার্থী ঘোষণার বদলে সাংসদ শামীম ওসমান জানিয়েছিলেন, ৮ মে সদর উপজেলা নির্বাচন হবে না। তিনি এ ব্যাপারে নিশ্চিত। যদিও এর একদিন আগে বিশেষ একটি সূত্রে এই তথ্য প্রকাশ করেছিল সংবাদচর্চা। এর আগে সুপ্রিম কোর্টের অ্যাপিলেট ডিভিশনে রিট দায়ের করেন মামলা সংশ্লিষ্ট বাদী পক্ষ। অভিযোগ রয়েছে, কোনো একটি মহলের ইন্ধনে আবুল কালাম আজাদ বিশ^াসই নির্বাচন বানচাল করতে ওই রিট করিয়েছেন। যার শুনানি রাখা হয়েছিল ২২ এপ্রিল।
তবে আবুল কালাম আজাদ বিশ^াস বলেন, যারা মামলা করেছেন তাদের সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই। এর পেছনে তার কোনো হাত নেই। তিনি দুর্বল বলে সবাই তার দিকে অভিযোগের আঙুল তুলেন বলেও দাবি করেন এই চেয়ারম্যান।
তার দাবি, ‘গরীবের বউ যেমন সবার বাউজ হয় তেমনি অবস্থা আমার। আমাকে দুর্বল পেয়ে সবাই আমার দিকেই আঙুল তুলেন। অথচ মামলার সঙ্গে আমার কোনো রকম সম্পৃক্ততা নেই।’
এদিকে স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন অন্য কথা। তারা বলছেন, মামলা যারা করেছেন তারা সকলেই আবুল কালাম আজাদ বিশ^াসেরই লোক। তার মদদেই মামলগুলো দায়ের করা হয়। এ কারণে গেল দশ বছর আগে তার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও তিনিই এই উপজেলার চেয়ারম্যান পদটি দখল করে রাখতে পেরেছেন।
স্থানীয়রা মনে করেন, আবুল কালাম তার লোকজন দিয়ে মামলা করালেও এই আজাদ বিশ^াস সাংসদ শামীম ওসমানের কথার বাইরে যাওয়ার মত সাহস রাখেন না। ইতোপূর্বে তিনি শামীম ওসমানের আস্থাভাজন, ঘনিষ্ঠ তেমন প্রমাণও দিয়েছেন। ফলে সাংসদ যদি চান এই মামলা মুহূর্তেই উঠে যাবে। এবারের তফসিল ঘোষণার পূর্বে হয়েছিলও তাই। যার কারণে নির্বাচনী পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে শামীম ওসমান বলয়ে প্রার্থীতা নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হওয়াতেই এই মামলা পুনরায় সামনে এসেছে। অথচ এই মামলা নিষ্পত্তি হয়েছিল গেল বছর। এতদিন পর কেন সুপ্রিম কোর্টে এ নিয়ে রিট করা হলোÑ এমন প্রশ্নও তুলেন স্থানীয়রা।